প্রাগৈতিহাসিক কুমির ডাইনোসর খেত!
প্রায় ৭ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে এমন এক কুমির-সম্পর্কিত শিকারি বাস করত, যা সম্ভবত এতটাই ভয়ংকর ছিল যে মাঝারি আকারের ডাইনোসরকেও নাশতার জন্য খেয়ে ফেলতে পারত।
আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে অবস্থিত ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল রিসার্চের ডিয়েগো পোল জানান, “এর বড় বড় দাঁতের ধার ছিল ছুরির মতো করাতের দাঁতের মতো, যা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে এটি সহজেই মাংস ও হাড় ছিঁড়ে ফেলতে পারত। সম্ভবত এটি ছোট ও মাঝারি আকারের ডাইনোসর বা অন্যান্য বড় শিকার শিকার করত।”
কোস্টেনসুখুস অ্যাট্রক্স নামের এই প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী জীবিত অবস্থায় প্রায় ৩.৫ মিটার লম্বা এবং প্রায় ২৫০ কেজি ওজনের ছিল। ২০২০ সালের মার্চে দক্ষিণ প্যাটাগোনিয়ায় এর জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়। সেখানে সুসংরক্ষিত খুলির অংশ এবং কঙ্কালের অংশ পাওয়া গেছে।
এর জেনাস নাম এসেছে প্যাটাগোনিয়ার প্রবল বাতাস ‘কোস্টেন’ এবং মিশরের কুমির-মুখো দেবতা ‘সৌচোস’ থেকে, আর ‘অ্যাট্রক্স’ গ্রিক ভাষায় যার অর্থ ভয়ংকর বা নির্মম।
ক্রিটেশিয়াস যুগের শেষভাগে এটি বসবাস করত এবং এটি পেইরোসরিড নামের এক প্রাচীন কুমির-সম্পর্কিত গোষ্ঠীর অন্তর্গত। ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে যে মহাবিনাশী ঘটনার মাধ্যমে অধিকাংশ ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছিল, সেই ঘটনায় এটি টিকে থাকতে পারেনি।
ডিয়েগো পোল বলেন, “আধুনিক কুমিরের মতো লম্বা ও চ্যাপ্টা মুখ নয়, কোস্টেনসুখুসের মাথা ছিল চওড়া, উঁচু এবং শক্তিশালী—যা বিশাল শক্তির জন্য তৈরি।” এর পা আধুনিক কুমিরের তুলনায় অনেক বেশি লম্বা ছিল, যা ইঙ্গিত দেয় এটি স্থলভাগে দ্রুত ও দক্ষভাবে চলাফেরা করতে পারত।
তিনি আরও বলেন, “এর শরীরের গঠন এবং খুলির আকৃতি দেখে বোঝা যায় এটি স্থলভাগেও চলাফেরা করতে পারত এবং হয়তো স্থলেই শিকার করত।”
আরেকটি প্রমাণ হলো এর নাসারন্ধ্র ছিল মুখের সামনে, খুলির ওপর নয়, যা বোঝায় এটি পুরো শরীর ডুবিয়ে রাখার সময় সহজে শ্বাস নিতে পারত না।
এর দাঁতের সংখ্যা ছিল ৫০-এর বেশি, অনেক দাঁতই ৫ সেন্টিমিটারের বেশি লম্বা। পোল বলেন, “এই দাঁত শুধু শিকার ধরার জন্য নয়, বরং মাংস ছিঁড়ে ফেলতে বিশেষভাবে উপযোগী ছিল।”
এসব বৈশিষ্ট্য দেখে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত যে এটি ছিল শীর্ষ শিকারি, যারা বিশাল মাংসাশী ডাইনোসরের পাশে পাশাপাশি বাস করত।