হ্যাভেন-১ : প্রথম বেসরকারি মহাকাশ স্টেশন!
মূল শব্দ: বেসরকারি মহাকাশ স্টেশন, হ্যাভেন-১, Vast, স্পেসএক্স, কক্ষপথ, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন, স্পেস স্টার্টআপ
২০২৬ সালে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি সম্পূর্ণ বেসরকারি মহাকাশ স্টেশন পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপিত হতে চলেছে। এই স্টেশনের নাম হ্যাভেন-১ (Haven-1), যা নির্মাণ করছে আমেরিকার বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা Vast। এটি মে ২০২৬-এ SpaceX Falcon 9 রকেটে করে উৎক্ষেপণ করা হবে।
এই হ্যাভেন-১ হবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS)-এর বিকল্প, তবে এটা কোনো রাষ্ট্র নয়, বরং একটি স্টার্টআপ নির্মাণ করছে। Vast-এর সিইও ম্যাক্স হট (Max Haot) বলেন, “যদি আমরা NASA-র চুক্তি পাওয়ার আগেই নিজেদের অর্থে স্টেশনটি সফলভাবে উৎক্ষেপণ করতে পারি, তাহলে আমরাই হব বিশ্বের প্রথম সফল বাণিজ্যিক মহাকাশ স্টেশন নির্মাতা।”
হ্যাভেন-১: সরল নকশা, দ্রুত বাস্তবায়ন
Vast-এর লক্ষ্য খুবই বাস্তবধর্মী। ISS-এর মতো বিশাল ল্যাবরেটরি নয়, বরং একটি ছোট, নির্ভরযোগ্য, নিরাপদ এবং কার্যকর স্টেশন। এর ভেতরের পরিসর একটি ছোট ট্যুর বাসের মতো (৪৫ ঘনমিটার)। NASA-র পুরনো প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি ‘ওপেন লুপ’ লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম ব্যবহার করা হবে।
প্রতি মিশনে ৪ জন মহাকাশচারী প্রায় ১০ দিন অবস্থান করবেন। মোট ৩ বছর ধরে ৪টি মিশন পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রতিটি মিশনে গবেষণা হবে মানবদেহ, ওষুধ, উদ্ভিদ ও প্রোটিন স্ফটিক গঠনের ওপর। এছাড়াও কৃত্রিম মাধ্যাকর্ষণ পরীক্ষা চালানো হবে।
নতুন রূপে মহাকাশবাস
ISS সবসময়েই কার্যকর হলেও দেখতে কিছুটা “ভাসমান পাইপলাইনের দোকান” এর মতো। কিন্তু হ্যাভেন-১ পুরোপুরি ভিন্ন—একটি ফিউচারিস্টিক, পরিষ্কার ও আরামদায়ক নকশা। Vast মনে করে, মহাকাশে কাজ করতে হলে আরামের পরিবেশও দরকার।
NASA-র অভিজ্ঞ মহাকাশচারী অ্যান্ড্রু ফিউস্টেল-এর নেতৃত্বে Vast টিম ক্রুদের আরামের বিষয়টি নতুন করে ভাবছে। উদাহরণস্বরূপ, ঘুমানোর জন্য ব্যবহার হবে এমন বিছানা যা শরীরকে আলতো চাপে রাখে—ISS-এ অনেক মহাকাশচারী নাকি ঘুমের সময় নিজেকে ক্যাবিনেটের মধ্যে আটকে রাখেন এই চাপ অনুভব করার জন্য!
মহাকাশ গবেষণার ভবিষ্যৎ
NASA ২০৩০-এর পর ISS বন্ধ করে দেবে। Vast চায় হ্যাভেন-১-এর সাফল্য দিয়েই NASA-র পরবর্তী চুক্তি পেতে। অন্যদিকে, Axiom Space ইতোমধ্যেই NASA-র কাছ থেকে $১৪০ মিলিয়নের চুক্তি পেয়েছে এবং ২০২৬-এর শেষ নাগাদ মডিউল যুক্ত করবে ISS-এ।
তবে Vast থেমে নেই। ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় আছে হ্যাভেন-২, এবং ২০২৮ থেকে প্রতি ৬ মাসে একটি করে নতুন মডিউল পাঠানো হবে, ২০৩২ সালের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক স্টেশন গড়ে তোলা হবে।
মহাকাশে হাই-স্পিড ইন্টারনেট
হ্যাভেন-১ হবে প্রথম স্টেশন যা SpaceX Starlink এর মাধ্যমে গিগাবিট গতির ইন্টারনেট সুবিধা পাবে। এতে মহাকাশে থেকেও পৃথিবীর সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা যুক্ত থাকা যাবে। গবেষণা, লাইভ কমিউনিকেশন, এমনকি সামাজিক মাধ্যমেও এটি এক নতুন যুগের সূচনা করতে পারে।
উপসংহার
হ্যাভেন-১ কোনও বিলাসবহুল হোটেল নয়, বরং এটি একটি কর্মস্থল—যেখানে মানুষ নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারবে। Vast-এর মূল বার্তা হলো: মহাকাশের ভবিষ্যৎ শুধুমাত্র রাষ্ট্রগুলোর নয়, যারা আগে পৌঁছাতে পারবে, ভবিষ্যৎ তাদেরই।