কসমিক হর্সশু’ গ্যালাক্সির রহস্য
ব্রহ্মাণ্ডের বিশাল ‘কসমিক হর্সশু’ গ্যালাক্সি ব্যবস্থায় এক বিশাল ব্ল্যাক হোল থাকতে পারে, যার ভর আমাদের সূর্যের ভরের প্রায় ৩৬ বিলিয়ন গুণ, যা মহাকাশে দেখা অন্যতম বৃহত্তম ব্ল্যাক হোল বলে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন। গবেষণায় এটি আবিষ্কার করা হয়েছে এক ধরনের আলোর আংটি ‘আইনস্টাইন রিং’-এর মাধ্যমে। এটি আসলে এক ধরনের গ্র্যাভিটেশনাল লেন্স, যেখানে সামনে থাকা বিশাল বস্তু, যেমন গ্যালাক্সি ক্লাস্টার বা ব্ল্যাক হোল, স্থান-কালকে বাঁকিয়ে পেছনের আরও দূরবর্তী বস্তুর আলো বড় করে দেখায়।
তবে বড় এবং তরুণ ব্ল্যাক হোলের ভর মাপা খুব কঠিন। কারণ আমরা সরাসরি ব্ল্যাক হোল দেখতে পারি না—তারা শুধু বিকিরণ বা কাছের বস্তুগুলোর ওপর প্রভাবের মাধ্যমে বোঝা যায়। তাই বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গণিতের মডেল ব্যবহার করে তাদের আকার আন্দাজ করেন। কিন্তু এই মডেলগুলির মধ্যে ত্রুটি থাকে এবং তরুণ ব্ল্যাক হোলগুলো এত দূরে যে তাদের আসল আকার পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। হার্ভার্ড ও স্মিথসোনিয়ানের জ্যোতির্বিজ্ঞানী থমাস কনর বলেন, “এটি অন্যতম বড়, তবে একেবারে সবচেয়ে বড় নয়। আর গবেষণায় আরও এক ব্ল্যাক হোলের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, যা হয়তো এর থেকেও বড় হতে পারে।”
২০১৯ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, ‘TON 618’ নামের ব্ল্যাক হোলটি প্রায় ৪০ বিলিয়ন সূর্যের সমান ভর নিয়ে সর্ববৃহৎ ব্ল্যাক হোল হতে পারে। তবে জ্যোতির্বিদদের কাছে শুধু আকারই নয়, এগুলোর উৎপত্তি নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। তরুণ গ্যালাক্সিতে এত বিশাল ব্ল্যাক হোল থাকা দেখায় যে মহাবিশ্বের শুরুর দিকে আমরা কত কম জানি। ধারণা করা হয়, বেশিরভাগ বড় গ্যালাক্সির মধ্যে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল থাকে এবং গ্যালাক্সি ও ব্ল্যাক হোল একসঙ্গে বড় হতে পারে। কিন্তু এটি সত্যিই কীভাবে ঘটেছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মতো আধুনিক পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলো ক্রমশ আরও বেশি আলট্রাম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল খুঁজে পাচ্ছে, যা মহাবিশ্বের খুব প্রাথমিক সময়ে এত বড় বস্তু তৈরি হওয়ার প্রশ্ন তুলছে। কনর বলেন, “এটি এমন যেন একটি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে হঠাৎ করে ছোট্ট লেব্রন জেমসকে পাওয়া।” অর্থাৎ মহাকাশে এত তাড়াতাড়ি এত বড় গ্যালাক্সি তৈরি হওয়ার ব্যাখ্যা দেওয়া অত্যন্ত কঠিন। হয়তো তাদের শুরুর দিকে অনেক দ্রুত বাড়তে হয়েছে এবং তারপর কয়েক বিলিয়ন বছর শান্ত থেকেছে। তবে এটি মহাবিশ্বের বৃদ্ধির মৌলিক নিয়মকেও চ্যালেঞ্জ করছে।
বিজ্ঞানীরা এখন এই বিরল ব্ল্যাক হোলগুলোর পরিবেশ নিয়ে আরও গবেষণা করছেন যাতে বোঝা যায় কীভাবে এগুলি বড় হয়েছে। ডার্ক ম্যাটারের ভূমিকা থাকতে পারে, যদিও তা এখনো পরিষ্কার নয়। কনর জানান, ‘কসমিক হর্সশু’ গ্যালাক্সির ব্ল্যাক হোলের আবিষ্কার আংশিকভাবে সম্ভব হয়েছে ভাগ্যের কারণে—তারা তারাদের চলাচল এবং গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং একসঙ্গে ব্যবহার করেছেন। এছাড়াও মহাবিশ্বে আরও অনেক বড় গ্যালাক্সি থাকতে পারে যাদের ব্ল্যাক হোল আমরা সহজে দেখতে পাই না।