জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নতুন আবিষ্কার
আজকের দিনে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আকাশে খুব কমই নতুন কিছু আবিষ্কার করেন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আকাশ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, তাই সহজে দেখা যায় এমন সব বস্তু অনেক আগেই খুঁজে বের হয়েছে। তবে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ করলে প্রায়ই অজানা কিছু সামনে আসে। উদাহরণস্বরূপ, তড়িৎচৌম্বকীয় বর্ণালীর ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে পর্যবেক্ষণ করলে অনেক নতুন জ্যোতিষ্ক ধরা পড়ে, কারণ তারা আলাদা ধরনের বিকিরণ নির্গত করে।
২০১৯ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এমনই এক অজানা শ্রেণির কাঠামো খুঁজে পান, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। এই আবিষ্কারটি হয় অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত নতুন রেডিও টেলিস্কোপ Australian Square Kilometer Array Pathfinder (ASKAP) ব্যবহার করে। এটি ৩৬টি রেডিও অ্যান্টেনা নিয়ে গঠিত, প্রতিটির ব্যাস ১২ মিটার।
আবিষ্কৃত বস্তুগুলো আকারে বড় ও গোলাকার ছিল। মহাকাশে গোলাকার কিছু দেখলে সাধারণত সেটি একটি বুদ্বুদের মতো ফাঁপা গঠন, যার কিনারায় বেশি উজ্জ্বলতা দেখা যায়। অনেক মরা তারা বাইরের দিকে গ্যাস ছুড়ে এমন গঠন তৈরি করে। কিন্তু ASKAP-এ দেখা নতুন বস্তুর কোনো পরিচিত উৎস পাওয়া যায়নি, আর তারা আলো বা ইনফ্রারেড তরঙ্গেও দৃশ্যমান ছিল না। কেবল রেডিও তরঙ্গে ধরা পড়েছিল। তাই এগুলোকে নাম দেওয়া হয়েছিল Odd Radio Circles (ORC) – অদ্ভুত রেডিও বৃত্ত।
প্রথম আবিষ্কৃত ORC-এর কেন্দ্রে একটি উপবৃত্তাকার ছায়াপথ ধরা পড়ে, যা পৃথিবী থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। যদি সেটিই প্রকৃত উৎস হয়, তবে ওই ORC-এর ব্যাস হবে প্রায় ২০ লাখ আলোকবর্ষ – আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির চেয়ে ১৫ গুণ বড়।
এরপর আরও কয়েকটি ORC আবিষ্কৃত হয়। কিছু ক্ষেত্রে কেন্দ্রে ছায়াপথ দেখা যায়, যা সম্পর্ক নির্দেশ করে। তবে সবগুলো একরকম নয়। উদাহরণস্বরূপ, ORC-২ ও ORC-৩ পাশাপাশি অবস্থান করছে, কিন্তু একটি উজ্জ্বল বৃত্তাকার রিংয়ের মতো আরেকটি ম্লান ভরাট চাকতির মতো। কেন তারা আলাদা দেখাচ্ছে, তা রহস্যময়।
একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হলো – সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল (অতিভারী কৃষ্ণগহ্বর) এর কার্যকলাপ। ব্ল্যাক হোলের চারপাশ থেকে প্রবল শক্তির জেট বেরিয়ে আশেপাশের গ্যাসকে ঠেলে দিতে পারে এবং এমন বিশাল বৃত্ত তৈরি হতে পারে। আবার কোনো কোনো ORC-এর সঙ্গে গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের সংঘর্ষ যুক্ত থাকতে পারে, যা প্রচণ্ড শক্তি ছড়িয়ে গ্যাসকে গোলাকার আকারে ঠেলে দেয়।
সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো, সব ORC-ই এক উৎস থেকে তৈরি নয়। কেউ কেউ সুপারনোভার অবশিষ্টাংশ হতে পারে, আবার কেউ ছায়াপথ সংঘর্ষ বা ব্ল্যাক হোল বিস্ফোরণের ফল। অর্থাৎ ORC আসলে নানা ধরনের ভিন্ন ভিন্ন মহাজাগতিক প্রক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে।
তাই “ORC” নামটি মূলত বর্ণনামূলক, ব্যাখ্যামূলক নয়। আরও পর্যবেক্ষণ ছাড়া সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয় কোন ORC কিসের ফল। তবে এটি নিশ্চিত যে, এগুলো এখনো জ্যোতির্বিজ্ঞানের একেবারে নতুন ও রহস্যময় শ্রেণি।