প্রাচীন এক ইন্টারস্টেলার বা আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূমকেতু আবিষ্কৃত
পাখি নাকি বিমান—এমন প্রশ্ন না করলেও চলে, কারণ এটি এক রহস্যময় ইন্টারস্টেলার বা আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তু, যা আমাদের সৌরজগত পেরিয়ে যাচ্ছে। ৩আই/এটলাস নামে এই ধূমকেতুটি নাসার অ্যাস্টেরয়েড টেরেস্ট্রিয়াল-ইমপ্যাক্ট লাস্ট অ্যালার্ট সিস্টেম (ATLAS) টেলিস্কোপ দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমানে এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৬৭৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে এবং এটি হতে পারে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে পুরোনো ধূমকেতু।
ধূমকেতুটি আবিষ্কারের পর এক জ্যোতির্বিজ্ঞানী ম্যাথিউ হপকিন্স বলেন, “আমার পরিকল্পিত শান্ত বুধবারের পরিবর্তে আমি হঠাৎ বার্তা পেতে শুরু করি—‘৩আই!!!!!!!!’।’’ তিনি ও তাঁর দল আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তুগুলির কক্ষপথ ও উৎসের ভিত্তিতে বৈশিষ্ট্য অনুমানের জন্য ‘Ōtautahi–Oxford’ মডেল তৈরি করেছেন।
আমাদের সৌরজগতের হ্যালির ধূমকেতুর মতো বস্তুগুলির বয়স সৌরজগতের ৪.৫ বিলিয়ন বছরের বেশি নয়। কিন্তু আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তুগুলো সৌরজগতের বাইরে তৈরি হওয়ায় এগুলি আরও প্রাচীন হতে পারে। গবেষকদের মডেল অনুযায়ী, ৩আই/এটলাসের বয়স সাত বিলিয়নেরও বেশি—যা এটিকে সবচেয়ে পুরোনো ধূমকেতু হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে।
এটি ২০১৯ সালের ২আই/বোরিসভ এবং ২০১৭ সালের ‘ওউমুয়ামুয়া’র পরে তৃতীয় পরিচিত আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তু। আগের দুটি বস্তু অপেক্ষা এটি অনেক খাড়া পথে ছায়াপথ পেরিয়ে যাচ্ছে, যা ইঙ্গিত দেয় এটি ছায়াপথের একেবারেই ভিন্ন অঞ্চলে তৈরি হয়েছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন এটি মিল্কিওয়ের ‘থিক ডিস্ক’ অঞ্চলে গঠিত হয়েছে, যেখানে প্রাচীন তারার আধিক্য এবং আমাদের ছায়াপথের প্রায় ১০ শতাংশ নক্ষত্রের ভর রয়েছে। যদি এটি সত্যি হয়, তবে ধূমকেতুটি জলীয় বরফে সমৃদ্ধ হতে পারে।
গবেষণার সহলেখক প্রফেসর ক্রিস লিনটট বলেন, “এটি এমন এক অঞ্চলের বস্তু, যেখানে আমরা আগে কখনো এত কাছ থেকে দেখতে পাইনি।” সূর্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় ধূমকেতুর পৃষ্ঠ উত্তপ্ত হলে এটি বাষ্প ও ধূলিকণুর ক্লাসিক আলোকিত লেজ তৈরি করে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূমকেতু শনাক্তকরণের পাশাপাশি নক্ষত্র ও গ্রহ গঠনের প্রক্রিয়া বুঝতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারে বলে আশাবাদী জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।